ওমরাহ ও তামাত্তু হজ্জের নিয়মাবলী ও প্রয়োজনীয় দো‘আ সমূহ:
১. ওমরাহ ও তামাত্তু হজ্জ (العمرة والحج التمتع) :
বাংলাদেশী হাজীগণ সাধারণতঃ তামাত্তু হজ্জ করে থাকেন। ঢাকা হ’তে জেদ্দা পৌঁছতে বিমানে সাধারণতঃ সাড়ে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। তামাত্তু হাজীগণ জেদ্দা অবতরণের অন্ততঃ আধা ঘন্টা পূর্বে বিমানের দেওয়া মীক্বাত বরাবর পৌঁছবার ঘোষণা ও সবুজ সংকেত দানের পরপরই ওযূ শেষে ওমরাহর জন্য ইহরামের কাপড় পরিধান করে (১) নিম্নোক্ত দো‘আ পড়বেন, لَبَّيْكَ عُمْرَةً ‘লাববায়েক ‘ওমরাতান’ (আমি ওমরাহর জন্য হাযির)। অতঃপর ‘তালবিয়াহ’ পাঠ করতে থাকবেন। অথবা (২) أَللّهُمَّ لَبَّيْكَ عُمْرَةً ‘আল্লা-হুম্মা লাববায়েক ওমরাতান’ (হে আল্লাহ! আমি ওমরাহর জন্য হাযির)। অথবা (৩) لَبَّيْكَ أَللَّهُمَّ عُمْرَةً مُتَمَتِّعًا بِهَا إِلَى الْحَجَّ فَيَسِّرْهَا لِىْ وَتَقَبَّلْهَا مِنِّىْ ‘লাববায়েক আললা-হুম্মা ‘ওমরাতাম মুতামাত্তি‘আন বিহা ইলাল হাজ্জি; ফাইয়াসসিরহা লী ওয়া তাক্বাববালহা মিন্নী’।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি ওমরাহর জন্য হাযির, হজ্জের উদ্দেশ্যে উপকার লাভকারী হিসাবে। অতএব তুমি আমার জন্য ওমরাহকে সহজ করে দাও এবং আমার পক্ষ হ’তে তা কবুল করে নাও’।
(৪) যারা একই ইহরামে ওমরাহ ও হজ্জ দু’টিই করবেন, তারা বলবেন, لَبَّيْكَ أَللَّهُمَّ عُمْرَةً وَحَجَّا ‘লাববায়েক আল্লা-হুম্মা ‘ওমরাতান ওয়া হাজ্জান’। (৫) যারা কেবলমাত্র হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধবেন, তারা বলবেন لَبَّيْكَ أَللَّهُمَّ حَجَّا ‘লাববায়েক আল্লা-হুম্মা হাজ্জান’।
(৬) কিন্তু যারা পথিমধ্যে অসুখের কারণে বা অন্য কোন কারণে হজ্জ আদায় করতে পারবেন না বলে আশংকা করবেন, তারা ‘লাববায়েক ওমরাতান’ অথবা ‘লাববায়েক হাজ্জান’ বলার পর নিম্নোক্ত শর্তাধীন দো‘আ পড়বেন-
فَإِنْ حَبَسَنِىْ حَابِسٌ فَمَحَلِّيْ حَيْثُ حَـــــتَنِىْ ‘ফাইন হাবাসানী হা-বিসুন, ফা মাহাল্লী হায়ছু হাবাসতানী’।
অর্থ: ‘যদি (আমার হজ্জ বা ওমরাহ পালনে) কোন কিছু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহ’লে যেখানে তুমি আমাকে বাধা দিবে (হে আল্লাহ!), সেখানেই আমার হালাল হওয়ার স্থান হবে’।[1]
(৭) যারা কারু পক্ষ থেকে বদলী হজ্জ করবেন, তারা তাদের মুওয়াক্কিল পুরুষ হ’লে মনে মনে তার নিয়ত করে বলবেন, لَبَّيْكَ عَنْ فُلاَنٍ ‘লাববায়েক ‘আন ফুলান’ (অমুকের পক্ষ হ’তে আমি হাযির)। আর মহিলা হ’লে বলবেন, ‘লাববায়েক ‘আন ফুলা-নাহ’। যদি ‘আন ফুলান বা ফুলা-নাহ বলতে ভুলে যান, তাতেও অসুবিধা নেই। নিয়তের উপরেই আমল কবুল হবে ইনশাআল্লাহ।
(৮) সঙ্গে নাবালক ছেলে বা মেয়ে থাকলে (তাদেরকে ওযূ করিয়ে ইহরাম বাঁধিয়ে) তাদের পক্ষ থেকে তাদের অভিভাবক মনে মনে তাদের নিয়ত করে উপরোক্ত দো‘আ পড়বেন।[2]
(৯) যদি কেউ ‘তালবিয়াহ’ পাঠ করতেও ভুলে যান, তাহ’লে তিনি অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইবেন এবং ‘তালবিয়াহ’ পাঠ করবেন। এজন্য তাকে কোন ফিদ্ইয়া দিতে হবে না।
(১০) বাংলাদেশী হাজীগণ যদি মদীনা হয়ে মক্কায় যান, তাহ’লে মদীনায় নেমে ‘যুল-হুলাইফা’ থেকে ইহরাম বাঁধবেন, তার আগে নয়। কেননা জেদ্দা হয়ে তিনি মদীনায় এসেছেন সাধারণ মুসাফির হিসাবে মসজিদে নববীতে ছালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে, হজ্জের উদ্দেশ্যে নয়। আর মসজিদে নববীতে ছালাত আদায় করা হজ্জের কোন অংশ নয়।
২. তালবিয়াহ (الةلبية) :
ইহরাম বাঁধার পর থেকে মাসজিদুল হারামে পৌঁছা পর্যন্ত ইহরামের কারণে নিষিদ্ধ বস্ত্ত সমূহ হ’তে বিরত থাকবেন এবং হালাল হওয়ার আগ পর্যন্ত সর্বদা সরবে নিম্নোক্ত দো‘আ পড়বেন, যাকে ‘তালবিয়াহ’ বলা হয়। পুরুষগণ সরবে[3] ও মহিলাগণ নিম্নস্বরে ‘তালবিয়াহ’ পাঠ করবেন।-
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَشَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَشَرِيْكَ لَكَ-
উচ্চারণ: ‘লাববাইকা আল্লা-হুম্মা লাববায়েক, লাববাইকা লা শারীকা লাকা লাববায়েক; ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক; লা শারীকা লাক’।
অর্থ: ‘আমি হাযির হে আল্লাহ আমি হাযির। আমি হাযির। তোমার কোন শরীক নেই, আমি হাযির। নিশ্চয়ই যাবতীয় প্রশংসা, অনুগ্রহ ও সাম্রাজ্য সবই তোমার; তোমার কোন শরীক নেই’।
উল্লেখ্য যে, জাহেলী যুগে আরবরা ত্বাওয়াফ কালে নিম্নোক্ত শিরকী তালবিয়াহ পাঠ করত।- লাববাইকা লা শারীকা লাকা, ইল্লা শারীকান হুয়া লাক; তামলিকুহু ওয়া মা মালাক’ (আমি হাযির; তোমার কোন শরীক নেই, কেবল ঐ শরীক যা তোমার জন্য রয়েছে। তুমি যার মালিক এবং যা কিছুর সে মালিক’)। মুশরিকরা ‘লাববাইকা লা শারীকা লাকা’ বলার পর রাসূল (ছাঃ) তাদের উদ্দেশ্যে ক্বাদ ক্বাদ (থামো থামো, আর বেড়োনা) বলতেন।[4] বস্ত্তত: ইসলাম এসে উক্ত শিরকী তালবিয়াহ পরিবর্তন করে পূর্বে বর্ণিত নির্ভেজাল তাওহীদ ভিত্তিক তালবিয়াহ প্রবর্তন করে। যার অতিরিক্ত কোন শব্দ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেননি’।[5]
‘তালবিয়া’ পাঠ শেষে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত কামনা করে এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য ছহীহ হাদীছে বর্ণিত দো‘আ সমূহ পাঠ করা যাবে। যেমন ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাহ, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনান্না-র’ (হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে জান্নাত প্রার্থনা করছি ও জাহান্নাম থেকে পানাহ চাচ্ছি)।[6] অথবা বলবে ‘রবেব ক্বিনী ‘আযা-বাকা ইয়াওমা তাব‘আছু ‘ইবা-দাকা’। ‘হে আমার প্রতিপালক! তোমার আযাব হ’তে আমাকে বাঁচাও! যেদিন তোমার বান্দাদের তুমি পুনরুত্থান ঘটাবে’।[7]
নিয়ত (النية) : মনে মনে ওমরাহ বা হজ্জের সংকল্প করা ও তালবিয়াহ পাঠ করাই যথেষ্ট। মুখে ‘নাওয়াইতুল ওমরাতা’ বা ‘নাওয়াইতুল হাজ্জা’ বলা বিদ‘আত।[8] উল্লেখ্য যে, হজ্জ বা ওমরাহর জন্য ‘তালবিয়াহ’ পাঠ করা ব্যতীত অন্য কোন ইবাদতের জন্য মুখে নিয়ত পাঠের কোন দলীল নেই।
ফযীলত : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘কোন মুসলমান যখন ‘তালবিয়াহ’ পাঠ করে, তখন তার ডাইনে-বামে, পূর্বে-পশ্চিমে তার ধ্বনির শেষ সীমা পর্যন্ত কংকর, গাছ ও মাটির ঢেলা সবকিছু তার সাথে ‘তালবিয়াহ’ পাঠ করে’।[9] ত্বীবী বলেন, অর্থাৎ যমীনে যা কিছু আছে, সবই তার তালবিয়াহর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে।
৩. মাসজিদুল হারামে প্রবেশের দো‘আ :
কা‘বা গৃহ দৃষ্টিগোচর হওয়া মাত্র ইচ্ছা করলে দু’হাত উঁচু করে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে যেকোন দো‘আ অথবা নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়া যায়, যা ওমর (রাঃ) পড়েছিলেন। اَللُّهُمَّ اَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ فَحَيِّنَا رَبَّنَا بِالسَّلاَمِ- ফাহাইয়েনা রববানা বিস সালাম’ শান্তির সাথে বাঁচিয়ে রাখো!’)।[10] অতঃপর মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করার সময় প্রথমে ডান পা রেখে নিম্নের দো‘আটি পড়বেন।-
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وسَلِّمْ، اَللَّهُمَّ افْتَحْ لِىْ أَبْوَابَ رَحَمَتِكَ-
(১) আল্লা-হুম্মা ছাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া সাল্লেম; আল্লা-হুম্মাফতাহলী আবওয়াবা রহমাতিকা’ (হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ-এর উপর অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষণ কর। হে আল্লাহ তুমি আমার জন্য তোমার অনুগ্রহের দরজা সমূহ খুলে দাও!’)।[11]
(২) অথবা বলবেন,
أَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَبِسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ-
আ‘ঊযু বিল্লা-হিল ‘আযীম, ওয়া বিওয়াজহিহিল কারীম, ওয়া বিসুলত্বা-নিহিল ক্বাদীমি মিনাশ শায়ত্বা-নির রজীম’ (‘আমি মহীয়ান ও গরীয়ান আল্লাহ এবং তাঁর মহান চেহারা ও চিরন্তন কর্তৃত্বের আশ্রয় প্রার্থনা করছি বিতাড়িত শয়তান হ’তে’।
এই দো‘আ পাঠ করলে শয়তান বলে, লোকটি সারা দিন আমার থেকে নিরাপদ হয়ে গেল’।[12] দু’টি দো‘আ একত্রে পড়ায় কোন দোষ নেই। বস্ত্ততঃ এ দো‘আ মসজিদে নববীসহ যেকোন মসজিদে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
মসজিদ থেকে বের হওয়ার দো‘আ:
প্রথমে বাম পা রেখে বলবেন, اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ سَلِّمْ، اَللَّهُمَّ إِنِّى أَسْئَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ ‘আল্লা-হুম্মা ছাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া সাল্লেম; আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিন ফাযলিকা’ (হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ-এর উপর অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষণ কর। হে আল্লাহ! আমি তোমার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি’)।
(২) অথবা বলবেন, اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ سَلِّمْ، اَللَّهُمَّ اعْصِمْنِىْ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمَ ‘আল্লা-হুম্মা ছাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া সাল্লেম; আল্লা-হুম্মা‘ছিমনী মিনাশ শায়ত্বা-নির রজীম’ নিরাপদ রাখো’)।[13] ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
৪. ত্বাওয়াফ (الطواف) :
‘ত্বাওয়াফ’ অর্থ প্রদক্ষিণ করা। পারিভাষিক অর্থে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহ প্রদক্ষিণ করাকে ত্বাওয়াফ বলে। অন্য কোন গৃহ প্রদক্ষিণ করাকে ত্বাওয়াফ বলা সিদ্ধ নয়। হাজারে আসওয়াদের নিকটবর্তী বনু শায়বাহ গেইট দিয়ে অথবা অন্য যেকোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করে ওযূ অবস্থায় সোজা মাত্বাফে গিয়ে কা‘বার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত ‘হাজারে আসওয়াদ’ (কালো পাথর) বরাবর সবুজ বাতির নীচ থেকে কা‘বা গৃহকে বামে রেখে ত্বাওয়াফ (প্রদক্ষিণ) শুরু করবেন। একে ‘ত্বাওয়াফে কুদূম’ বা আগমনী ত্বাওয়াফ বলে।
উল্লেখ্য যে, ত্বাওয়াফ হ’ল ছালাতের ন্যায়। এসময় চুপে চুপে দো‘আসমূহ পড়তে হয়। তবে এখানে বাধ্যগত অবস্থায় কল্যাণকর সামান্য কথা বলার অনুমতি আল্লাহ দিয়েছেন।[14] ওযূ অবস্থায় ত্বাওয়াফ শুরু করতে হবে। তবে মাঝখানে ওযূ টুটে গেলে এবং ভিড়ের কারণে ওযূ করা কষ্টকর হ’লে ঐ অবস্থায় ত্বাওয়াফ শেষ করবেন।[15] পুনরায় ক্বাযা করতে হবে না। এরূপ অবস্থায় শেষের দু’রাক‘আত নফল ছালাত পুনরায় ওযূ করে হারামের যেকোন স্থানে পড়ে নিবেন। ত্বাওয়াফের মধ্যে মেয়েদের ঋতু শুরু হ’লে ত্বাওয়াফ ছেড়ে দিবেন এবং বাকী অন্যান্য কাজসমূহ করবেন। উল্লেখ্য যে, সাঈর জন্য ওযূ শর্ত নয়, তবে মুস্তাহাব।
এই ত্বাওয়াফের সময় পুরুষেরা ‘ইযত্বিবা’ করবেন। অর্থাৎ ডান বগলের নীচ দিয়ে ইহরামের কাপড় বাম কাঁধের উপরে উঠিয়ে রাখবেন ও ডান কাঁধ খোলা রাখবেন। তবে অন্যান্য ত্বাওয়াফ যেমন ত্বাওয়াফে ইফাযাহ, ত্বাওয়াফে বিদা‘ ইত্যাদির সময় এবং ছালাতের সময় সহ অন্য সকল অবস্থায় মুহরিম তার উভয় কাঁধ ঢেকে রাখবেন। হাজারে আসওয়াদ থেকে প্রতিটি ত্বাওয়াফ শুরু হবে ও সেখানে এসেই শেষ হবে।
ত্বাওয়াফের শুরুতে ‘হাজারে আসওয়াদ’-এর দিকে হাত ইশারা করে বলবেন, بِِسْـمِ اللهِ وَاللهُ أَكْبَرُ ‘বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লা-হু আকবর’ (আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং আল্লাহ সবার বড়)। অথবা শুধু ‘আল্লাহু আকবর’ বলবেন।[16] এভাবে যখনই হাজারে আসওয়াদ বরাবর পৌঁছবেন, তখনই ডান হাতে ইশারা দিয়ে ‘আল্লাহু আকবর’ বলবেন। ভিড় কম থাকার সুযোগ নেই। তবুও সুযোগ পেলে অন্ততঃ ত্বাওয়াফের শুরুতে এবং শেষে ‘হাজারে আসওয়াদ’ চুম্বন করার সুন্নাত আদায় করবেন।
মোট ৭টি ত্বাওয়াফ হবে। প্রথম তিনটি ত্বাওয়াফে ‘রমল’[17] বা একটু জোরে চলতে হবে এবং শেষের চার ত্বাওয়াফে স্বাভাবিক গতিতে চলবেন। মহিলাগণ সর্বদা স্বাভাবিক গতিতে চলবেন।[18]
অতঃপর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত ‘রুকনে ইয়ামানী’ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ‘হাজারে আসওয়াদ’ পর্যন্ত দক্ষিণ দেওয়াল এলাকায় পৌঁছে প্রতি ত্বাওয়াফে এই দো‘আ পড়বেন-
رَبَّنَا آتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِى الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ-
উচ্চারণ: ‘রববা-না আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আ-খিরাতে হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা ‘আযা-বান্না-র’।
অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে দুনিয়ায় কল্যাণ দাও ও আখিরাতে মঙ্গল দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হ’তে রক্ষা কর’।[19] এ সময় ডান হাত দিয়ে ‘রুক্নে ইয়ামানী’ স্পর্শ করবেন ও বলবেন بٍسْـمِ اللهِ وَاللهُ أَكْبَرُ ‘বিসমিল্লা-হি, ওয়াল্লা-হু আকবর’। তবে চুমু দিবেন না। ভিড়ের জন্য সম্ভব না হ’লে স্পর্শ করারও দরকার নেই বা ওদিকে ইশারা করে ‘আল্লাহু আকবর’ বলারও প্রয়োজন নেই। কেবল ‘রববানা আ-তিনা…’ দো‘আটি পড়ে চলে যাবেন। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) অধিকাংশ সময় অত্র দো‘আটি পাঠ করতেন। উল্লেখ্য যে, রববানা-এর স্থলে আল্লা-হুম্মা আ-তিনা কিংবা আল্লা-হুম্মা রববানা আ-তিনা বললে সিজদাতেও এ দো‘আ পড়া যাবে। এতদ্ব্যতীত ছালাত, সাঈ, আরাফা, মুযদালিফা সর্বত্র সর্বদা এ দো‘আ পড়া যাবে। এটি একটি সারগর্ভ ও সর্বাত্মক দো‘আ। যা দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণকর সবকিছুকে শামিল করে এবং যা সর্বাবস্থায় পড়া যায়।
উল্লেখ্য যে, কা‘বার উত্তর পার্শ্বে স্বল্প উচ্চ দেওয়াল ঘেরা ‘হাত্বীম’-এর বাহির দিয়ে ত্বাওয়াফ করতে হবে। ভিতর দিয়ে গেলে ঐ ত্বাওয়াফ বাতিল হবে ও পুনরায় আরেকটি ত্বাওয়াফ করতে হবে। কেননা ‘হাত্বীম’[20] অংশটি মূল কা‘বার অন্তর্ভুক্ত। যাকে বাদ দিলে কা‘বা বাদ পড়ে যাবে।
ত্বাওয়াফ শেষের ছালাত : সাত ত্বাওয়াফ শেষে মাক্বামে ইবরাহীমের[21] পিছনে বা ভিড়ের কারণে অসম্ভব হ’লে হারাম শরীফের যেকোন স্থানে হালকাভাবে নীরবে দু’রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করবেন। এই সময় ডান কাঁধ ঢেকে নিবেন। (ক) এই ছালাত নিষিদ্ধ তিন সময়েও পড়া যাবে (খ) যদি বাধ্যগত কোন শারঈ কারণে বা ভুলবশতঃ এই ছালাত আদায় না করে কেউ বেরিয়ে আসেন, তাতে কোন দোষ হবে না। কারণ এটি ওয়াজিব নয় (গ) এখানে সুৎরা ছাড়াই ছালাত জায়েয। তবে মুছল্লীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ওয়াজিব। মুছল্লীর সিজদার স্থান হ’তে একটি বকরী যাওয়ার মত দুরত্বের বাহির দিয়ে অতিক্রম করা যাবে।[22] (ঘ) উক্ত ছালাতে সূরায়ে ফাতিহা শেষে প্রথম রাক‘আতে ‘সূরা কাফেরূন’ ও দ্বিতীয় রাক‘আতে ‘সূরা ইখলাছ’ পাঠ করবেন। তবে অন্য সূরাও পাঠ করা যাবে। (ঙ) ত্বাওয়াফ ও সাঈ-তে সংখ্যা গণনায় কম হয়েছে বলে নিশ্চিত ধারণা হ’লে বাকীটা পূর্ণ করে নিবেন। ধারণা অনিশ্চিত হ’লে বা গণনায় বেশী হ’লে কোন দোষ নেই।
ছালাত শেষে সম্ভব হ’লে হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করবেন। অতঃপর নিকটেই পূর্ব-দক্ষিণে ‘যমযম’ এলাকায় প্রবেশ করে সেখান থেকে পানি পান করে পাশেই ‘ছাফা’ পাহাড়ে উঠে যাবেন।
৫. সাঈ (السعى) :
সাঈ অর্থ দৌড়ানো। পারিভাষিক অর্থে, হজ্জ বা ওমরাহর উদ্দেশ্যে ছাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে দৌড়ানোকে সাঈ বলা হয়। ত্বাওয়াফ শেষে ছাফা ও মারওয়ার মধ্যে সাতবার সাঈ করবেন।[23] দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী দুই সবুজ দাগের মধ্যে একটু জোরে দৌড়াবেন। তবে মহিলাগণ স্বাভাবিক গতিতে চলবেন।
‘সাঈ’ অর্থ দৌঁড়ানো। তৃষ্ণার্ত মা হাজেরা শিশু ইসমাঈলের ও নিজের পানি পানের জন্য মানুষের সন্ধানে পাগলপারা হয়ে ছাফা ও মারওয়া পাহাড়ে উঠে দেখতে চেয়েছিলেন কোন ব্যবসায়ী কাফেলার সন্ধান মেলে কি-না। সেই কষ্টকর ও করুণ স্মৃতি মনে রেখেই এ সাঈ করতে হয়।
(১) ত্বাওয়াফ শেষে ছাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী হয়ে বলবেন, আমরা শুরু করছি সেখান থেকে যা দিয়ে আল্লাহ শুরু করেছেন। অতঃপর নিম্নোক্ত আয়াতটি পাঠ করবেন- إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللهَ شَاكِرٌ عَلِيْمٌ ‘ইন্নাছ ছাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শা‘আ-ইরিল্লা-হ। ফামান হাজ্জাল বাইতা আবি‘তামারা ফালা জুনা-হা ‘আলাইহি আইঁ ইয়াত্ত্বাউওয়াফা বিহিমা। ওয়ামান তাত্বাউওয়া‘আ খায়রান, ফাইন্নাল্লা-হা শা-কেরুন ‘আলীম’। (নিশ্চয়ই ছাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম। অতএব যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর হজ্জ অথবা ওমরা করবে, তার জন্য এদু’টি পাহাড় প্রদক্ষিণ করায় দোষ নেই। সুতরাং যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার যথার্থ মূল্যায়নকারী ও তার সম্পর্কে সম্যক অবগত’ (বাক্বারাহ ২/১৫৮)।
(২) অতঃপর ছাফা পাহাড়ে উঠে কা‘বার দিকে দেখবেন ও সেদিকে তাকিয়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল-হামদুলিল্লাহ বলবেন ও তিনবার আল্লাহু আকবর বলবেন। দেয়াল বা পিলার সমূহের কারণে কা‘বা দেখায় সমস্যা হ’লেও সেদিকে তাকাবেন ও দেখতে চেষ্টা করবেন। দেখতে পেলে সুন্নাতের অনুসরণ হ’ল। না পেলেও কোন দোষ নেই। অতঃপর কা‘বা-র দিকে মুখ করে দু’হাত উঠিয়ে তিনবার নিম্নের দো‘আটি পাঠ করবেন ও অন্যান্য দো‘আ করবেন।-
لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَشَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِِىْ وَيُمِيْتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٌ- لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَشَرِيْكَ لَهُ، أَنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ-
উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু; ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লে শাইয়িন ক্বাদীর। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ, আনজাযা ওয়া‘দাহূ ওয়া নাছারা ‘আবদাহূ, ওয়া হাযামাল আহ্যা-বা ওয়াহদাহূ’।
অর্থ: ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি এক। তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁরই জন্য সকল রাজত্ব ও তাঁরই জন্য সকল প্রশংসা। তিনিই বাঁচান ও তিনিই মারেন এবং তিনি সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাশালী’। ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি এক। তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন ও স্বীয় বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই শত্রু দলকে ধ্বংস করেছেন’।[24]
(৩) ছাফা থেকে মারওয়া পর্যন্ত এক সাঈ, মারওয়া থেকে ছাফা পর্যন্ত আরেক সাঈ। এমনিভাবে ছাফা থেকে সাঈ শুরু হ’য়ে মারওয়াতে গিয়ে সপ্তম সাঈ শেষ হবে ও সেখান থেকে ডান দিকে বেরিয়ে পাশেই সেলুনে গিয়ে মাথা মুন্ডন করবেন অথবা সমস্ত চুল ছেটে খাটো করবেন।
(৪) মহিলাগণ তাদের চুলের বেণী হ’তে অঙ্গুলীর অগ্রভাগ সমান অল্প কিছু চুল কেটে ফেলবেন।
(৫) ওমরাহর পরে হজ্জের সময় নিকটবর্তী হ’লে চুল খাটো করাই ভাল। পরে হজ্জের সময় মাথা মুন্ডন করবেন। এরপর হালাল হয়ে যাবেন ও ইহরাম খুলে স্বাভাবিক পোষাক পরবেন।
(৬) তবে সাঈ-র সময় মহিলাদের দৌড়াতে হয় না সম্ভবতঃ তাদের পর্দার কারণে ও স্বাস্থ্যগত কারণে।
(৭) প্রতিবার ছাফা ও মারওয়াতে উঠে কা‘বামুখী হয়ে পূর্বের ন্যায় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও তিনবার আল্লাহু আকবার বলবেন ও হাত উঠিয়ে পূর্বের দো‘আটি পাঠ করবেন।
(৮) ত্বাওয়াফ ও সাঈ অবস্থায় নির্দিষ্ট কোন দো‘আ নেই। বরং যার যা দো‘আ মুখস্ত আছে, তাই নীরবে পড়বেন। অবশ্যই তা ছহীহ হাদীছে বর্ণিত দো‘আ হওয়া বাঞ্ছনীয়। বান্দা তার প্রভুর নিকটে তার মনের সকল কথা নিবেদন করবেন। আল্লাহ তার বান্দার হৃদয়ের খবর রাখেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) ও আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) এই সময় পড়েছেন : رَبِّ اغْفِرْ وَ ارْحَمْ وَأَنْتَ الْأَعَزُّ الْأَكْرَمُ ‘রবিবগফির ওয়ারহাম ওয়া আনতাল আ‘আযযুল আকরাম’ (হে প্রভু! আমাকে ক্ষমা কর ও দয়া কর। আর তুমিই সর্বোচ্চ সম্মানিত ও সবচেয়ে দয়ালু)।[25]
(৯) তাছাড়া এই সময় অধিকহারে ‘সুবহা-নাল্লাহ’ ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ পড়বেন বা কুরআন তেলাওয়াত করবেন।
(১০) সাঈ-র জন্য ওযূ বা পবিত্রতা শর্ত নয়, তবে মুস্তাহাব।[26]
জ্ঞাতব্য : (ক) সাঈ-র মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লে বাকী সাঈগুলি ট্রলিতে করায় দোষ নেই (খ) ত্বাওয়াফ ও সাঈ-র সময় একজন দলনেতা বই বের করে জোরে জোরে পড়তে থাকেন ও তার সাথীরা পিছে পিছে সরবে তা উচ্চারণ করতে থাকে। এ প্রথাটি বিদ‘আত। এটা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। অর্থ না বুঝে এভাবে সমস্বরে ও উচ্চৈঃস্বরে দো‘আ পাঠ করার মধ্যে যেমন খুশূ-খুযূ থাকে না, তেমনি তা নিজ হৃদয়ে কোনরূপ রেখাপাত করে না। ফলে এভাবে তোতাপাখির বুলি আওড়ানোর মধ্যে কোনরূপ নেকী লাভ হবে না। উপরন্তু অন্যের নীরব দো‘আ ও খুশূ-খুযূ-তে বিঘ্ন সৃষ্টি করার দায়ে নিঃসন্দেহে তাকে গোনাহগার হ’তে হবে।
(গ) ত্বাওয়াফের পরেই সাঈ করার নিয়ম। কিন্তু যদি কেউ ত্বাওয়াফে ইফাযাহর পূর্বেই অজ্ঞতাবশে বা ভুলক্রমে সাঈ করেন, তাতে কোন দোষ হবে না।
মহিলাদের জ্ঞাতব্য (معلومات النساء) :
(১) মহিলাগণ মাহরাম সঙ্গী ব্যতীত কোন গায়ের মাহরাম ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে হজ্জ বা ওমরাহ করতে পারবেন না।[27]
মাহরাম হ’ল রক্ত সম্পর্কীয় ৭ জন : (১) পিতা-দাদা (২) পুত্র-পৌত্র ও অধঃস্তন (৩) ভ্রাতা (৪) ভ্রাতুষ্পুত্র ও অধঃস্তন (৫) ভগিনীপুত্র ও অধঃস্তন (৬) চাচা (৭) মামু। এতদ্ব্যতীত দুগ্ধ সম্পর্কীয়গণ।
বিবাহ সম্পর্কীয় ৪ জন : (১) স্বামীর পুত্র বা পৌত্র (২) স্বামীর পিতা বা দাদা (৩) জামাতা, পৌত্রী-জামাতা, নাতিন জামাতা (৪) মাতার স্বামী বা দাদী-নানীর স্বামী।
(২) ঋতুবতী ও নেফাসওয়ালী মহিলাগণ ত্বাওয়াফ (ও ছালাত) ব্যতীত হজ্জ ও ওমরাহর সবকিছু পালন করবেন।[28] (৩) যদি ওমরাহর ইহরাম বাঁধার সময়ে বা পরে নাপাকী শুরু হয় এবং ৮ তারিখের পূর্বে পাক না হয়, তাহ’লে ঐ অবস্থায় নিজ অবস্থানস্থল থেকে হজ্জের ইহরাম বাঁধবেন এবং তিনি তখন ওমরাহ ও হজ্জ মিলিতভাবে ক্বিরান হজ্জকারিনী হবেন। (৪) পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তিনি ত্বাওয়াফ ব্যতীত সাঈ, ওকূফে আরাফা, মুযদালিফা, মিনায় কংকর মারা, বিভিন্ন দো‘আ-দরূদ পড়া, কুরবানী করা, চুলের মাথা কাটা ইত্যাদি হজ্জের বাকী সব অনুষ্ঠান পালন করবেন। (৫) নাপাক থাকলে বিদায়ী ত্বাওয়াফ ছাড়াই দেশে ফিরবেন।
[1]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৭১১।
[2]. ক্বাহত্বানী, পৃঃ ৫২-৫৫।
[3]. মুওয়াত্ত্বা, তিরমিযী প্রভৃতি, মিশকাত হা/২৫৪৯।
[4]. মুসলিম, ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে; মিশকাত হা/২৫৫৪ ‘ইহরাম ও তালবিয়াহ’ অনুচ্ছেদ।
[5]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫৪১ ‘ইহরাম ও তালবিয়াহ’ অনুচ্ছেদ।
[6]. আবূদাঊদ হা/৭৯৩; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৮৬৫।
[7]. মুসলিম, মিশকাত হা/৯৪৭ ‘তাশাহহুদে দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৭।
[8]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪৬৪ পৃঃ।
[9]. তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৫৫০।
[10]. বায়হাক্বী ৫/৭৩; আলবানী, মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ‘ওমরাহ পৃঃ ২০।
[11]. হাকেম ১/২১৮; আবুদাঊদ হা/৪৬৫; ইবনু মাজাহ হা/৭৭২-৭৩; ছহীহাহ হা/২৪৭৮।
[12]. আবুদাঊদ হা/৪৬৬; মিশকাত হা/৭৪৯।
[13]. ইবনু মাজাহ হা/৭৭৩; ছহীহাহ হা/২৪৭৮।
[14]. তিরমিযী ও অন্যান্য; মিশকাত হা/২৫৭৬; ইরওয়া হা/১২১; ত্বাওয়াফের তাৎপর্য : ‘বায়তুল্লাহ’ প্রদক্ষিণ বা ত্বাওয়াফের তাৎপর্য সম্ভবতঃ নিম্নের বিষয়গুলিই হ’তে পারে। যেমন (১) এটাই পৃথিবীতে আল্লাহর ইবাদতের জন্য নির্মিত প্রথম গৃহ (আলে ইমরান ৩/৯৬)। (২) এটি পৃথিবীর নাভিস্থল এবং ঘুর্ণায়মান লাটিমের কেন্দ্রের মত। (৩) প্রত্যেক ছোট বস্ত্ত বড় বস্ত্তকে কেন্দ্র করে ঘোরে। যেমন চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে এবং পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে। এমনিভাবে সৃষ্টিজগতের সবকিছু তার সৃষ্টিকর্তার দিকে আবর্তিত হচ্ছে। আবর্তন কেন্দ্র সর্বদা এক ও অবিভাজ্য। আর তিনিই আল্লাহ, যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্ব চরাচরের ধারক। কা‘বা আল্লাহর গৃহ। এটি তাঁর একত্বের প্রতীক। বান্দাকে তাই তিনি এ গৃহ প্রদক্ষিণ করার নির্দেশ দিয়েছেন (হজ্জ ২২/২৯)। এটি আল্লাহর প্রতি বান্দার মুখাপেক্ষীতার ও দাসত্ব প্রকাশের অনন্য নিদর্শন। বলা বাহুল্য, এ গৃহ ব্যতীত অন্য কোন গৃহ প্রদক্ষিণের নির্দেশ আল্লাহ কাউকে দেননি (৪) ঘড়ির কাঁটার অনুকূলে সকল কাজ ডান দিক থেকে বামে করতে বলা হ’লেও কা‘বা প্রদক্ষিণ বাম থেকে ডাইনে করতে হয়। কারণ পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদি প্রকৃতির সবকিছু এমনকি দেহের রক্ত প্রবাহ বাম থেকে ডাইনে আবর্তিত হয়। আল্লাহর গৃহের ত্বাওয়াফ কালে তাই পুরা প্রকৃতিকে সাথে নিয়ে আমরা ত্বাওয়াফ করি এবং সকলের সাথে আমরা আল্লাহর প্রশংসা করি ও তাঁর বড়ত্ব ঘোষণা করি। তাই এটি ফিৎরত বা স্বভাবধর্ম অনুযায়ী করা হয়। যার উপরে আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন (রূম ৩০/৩০)। (৫) মানুষের হৃৎপিন্ড বুকের বাম দিকে থাকে। কা‘বাকে বামে রেখে ডাইনে প্রদক্ষিণের ফলে কা‘বার প্রতি হৃদয়ের অধিক আকর্ষণ ও নৈকট্য অনুভূত হয়, যা স্বভাবধর্মের অনুকূলে। (৬) হাজীগণ আল্লাহর মেহমান। তাই মেযবানের কাছে আগমন ও বিদায় তাঁর গৃহ থেকেই হওয়া স্বাভাবিক। ত্বাওয়াফে কুদূম ও ত্বাওয়াফে বিদা‘ সে উদ্দেশ্যেই করা হয়ে থাকে। বস্ত্ততঃ (৭) ত্বাওয়াফের মাধ্যমে পৃথিবী ও সৌরজগতের অবিরত ঘুর্ণনের গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক তথ্যের ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যা নিরক্ষর নবীর নবুঅতের একটি প্রকৃষ্ট প্রমাণ বটে \
[15]. উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৭/৩০০; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৬/২১১-১৩।
[16]. বায়হাক্বী ৫/৭৯ পৃঃ।
[17]. ‘রমল’ (الرمل) করার কারণ এই যে, আগের বছর ৬ষ্ঠ হিজরীর যুলক্বা‘দাহ মাসে ওমরাহ করতে এসে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হোদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তি অনুযায়ী পরের বছর ৭ম হিজরীর যুলক্বা‘দাহ মাসে ওমরাহ আদায়ের দিন কাফেররা দীর্ঘ সফরে ক্লান্ত মুসলমানদের ত্বাওয়াফের প্রতি তাচ্ছিল্যপূর্ণ ইঙ্গিত করে বলেছিল যে, ‘ইয়াছরিবের জ্বর এদের দুর্বল করে দিয়েছে’। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তখন শক্তি প্রদর্শনের জন্য মুসলমানদের প্রতি দ্রুত চলার আদেশ দেন’। ওমর (রাঃ) বলেন, ডান কাঁধ খুলে ত্বাওয়াফের কারণও ছিল সেটাই’ (মিরক্বাত ৫/৩১৪)। বস্ত্ততঃ এর দ্বারা দ্বীন প্রতিষ্ঠায় ছাহাবায়ে কেরামের কষ্টকর খিদমতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় এবং জানিয়ে দেওয়া হয় যে, আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে মুসলমান কোন যুগেই দুর্বল নয়। তাছাড়া এর মধ্যে অন্য কল্যাণও রয়েছে যে, প্রথম দিকে যে শক্তি থাকে, শেষের দিকে তা থাকে না। তাই প্রথমে যদি দ্রুত না চলা হয়, তাহ’লে সাত ত্বাওয়াফ শেষ করতে ক্লান্তিকর দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন পড়ে। কেননা এমনিতেই এতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যায় \
[18]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৫৬৬।
[19]. বাক্বারাহ ২/২০১; ছহীহ আবুদাঊদ হা/১৬৬৬; মিশকাত হা/২৫৮১; বুখারী হা/৪৫২২, ৬৩৮৯; মিশকাত হা/২৪৮৭।
[20] . কা‘বা ও হাত্বীম : ‘হাত্বীম’ (الحطيم) হ’ল কা‘বা গৃহের মূল ভিতের উত্তর দিকের পরিত্যক্ত অংশের নাম। যা একটি স্বল্প উচ্চ অর্ধ গোলাকার প্রাচীর দ্বারা চিহ্নিত করা আছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নবুঅত লাভের পাঁচ বছর পূর্বে তাঁর ৩৫ বছর বয়স কালে কুরায়েশ নেতাগণ বন্যার তোড়ে ধ্বসে পড়ার উপক্রম বহু বছরের প্রাচীন ইবরাহীমী কা‘বাকে ভেঙ্গে নতুনভাবে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। তারা তাদের পবিত্র উপার্জন দ্বারা এক এক গোত্র এক এক অংশ নির্মাণের দায়িত্ব ভাগ করে নেন। কিন্তু উত্তরাংশের দায়িত্বপ্রাপ্ত বনু ‘আদী বিন কা‘ব বিন লুওয়াই তাদের হালাল অর্থের ঘাটতি থাকায় ব্যর্থ হয়। ফলে ঐ অংশের প্রায় ৬ হাত জায়গা বাদ রেখেই দেওয়াল নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়। এতে ইবরাহীমী কা‘বার ঐ অংশটুকু বাদ পড়ে যায়। যা ‘হাত্বীম’ বা পরিত্যক্ত নামে আজও ঐভাবে আছে। এই সময় ‘হাজারে আসওয়াদ’ রাখা নিয়ে গোত্রগুলির মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের উপক্রম হ’লে
[21]. মাক্বামে ইবরাহীম : কা‘বার পূর্ব-উত্তর পার্শ্বে পিতা ইবরাহীম (আঃ)-এর দাঁড়ানোর স্থানকে ‘মাক্বামে ইবরাহীম’ বলা হয়। আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, وَاتَّخِذُوْا مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيْمَ مُصَلًّى ‘তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়ানোর স্থানকে ছালাতের স্থান বানাও’ (বাক্বারাহ ২/১২৫)। এখানে দাঁড়ানো ইমামের পিছনে ভাষা, বর্ণ, অঞ্চল নির্বিশেষে সকল মুসলিম একত্রে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করেন। মাক্বামে ইবরাহীম তাই বিশ্ব মুসলিম ঐক্যের প্রাণকেন্দ্র। অথচ চার মাযহাবের তাক্বলীদপন্থী আলেম ও তাদের অনুসারীদের সন্তুষ্ট করতে গিয়ে তৎকালীন মিসরের বুরজী মামলূক সুলতান ফারজ বিন বারকূকের নির্দেশে ৮০১ হিজরী সনে (১৪০৬ খৃঃ) কা‘বা গৃহের চারপাশে চারটি মুছাল্লা কায়েম করা হয়, যা মাযহাবী বিভক্তিকে স্থায়ী রূপ দেয়। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে বর্তমান সঊদী শাসক পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আযীয আলে সঊদ ১৩৪৩ হিজরী সনে (১৯২৭ খৃঃ) উক্ত চার মুছাল্লার বিদ‘আত উৎখাত করেন এবং ৫৪২ বছর পরে মুসলমানগণ পুনরায় মাক্বামে ইবরাহীমে এক ইমামের পিছনে ঐক্যবদ্ধভাবে ছালাত আদায়ের সুযোগ লাভে ধন্য হয়। যা আজও অব্যাহত আছে। ফালিল্লা-হিল হাম্দ।
[22]. বুখারী হা/৪৯৬; মুসলিম হা/১১৩৪।
[23]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫৫৭; ছাফা পাহাড় : কা‘বা গৃহের পূর্ব-দক্ষিণে ‘ছাফা পাহাড়’ অবস্থিত। সেখান থেকে সোজা উত্তর দিকে প্রায় অর্ধ কিঃ মিঃ (৪৫০ মিঃ) দূরে ‘মারওয়া পাহাড়’ অবস্থিত। উভয় পাহাড়ে সাতবার সাঈ-তে ৩.১৫ কিঃমিঃ পথ অতিক্রম করতে হয়।
[24]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৫৫৫; আবুদাঊদ হা/১৮৭২।
[25]. বায়হাক্বী ৫/৯৫ পৃঃ।
[26]. ফাতাওয়া ইবনু বায ৫/২৬৪ পৃঃ।
[27] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫১৩, ২৫১৫।
[28]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫৭২।